
মোঃ আশরাফুল ইসলামের, স্টাফ রিপোর্টার.
শৈশবেই মাকে হারানো, কৈশোরে বাবার মৃত্যু—দু’জন অভিভাবককে হারিয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া জীবনের পথ থেকে যে ছেলেটি স্বপ্নকে ধরে রেখেছিল, সেই ছেলে আজ সরকারি চাকরিজীবী মো. শরিফ হোসেন। মানিকগঞ্জের একটি নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষিজীবী পরিবারের সন্তান শরীফ নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে প্রমাণ করেছেন—কষ্টই মানুষকে শক্ত করে, আর স্বপ্নই মানুষকে পথ দেখায়।
দেড়–দুই বছরের মাথায় মাকে হারান শরীফ। বাবার কষ্ট, সংগ্রাম আর ভালোবাসাই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা। কৃষিকাজে গিয়ে ছোট্ট শরীফকে মাঠের আইলে বসিয়ে কাজ করতেন বাবা। সন্তানদের মানুষ করার স্বপ্নে নিজের সুখ, নতুন জামা–কাপড়—সব বিসর্জন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বাবাকেও হারান শরীফ।
অভাব আর অনাথত্ব সত্ত্বেও থেমে যাননি। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক—সব পর্যায়ে ভালো ফল করেন। শিক্ষকদের স্নেহ, কিছু মানুষের সহায়তা এবং নিজের অবিচল মনোবল তাঁকে সামনে এগিয়ে দেয়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও আর্থিক সংকট থামাতে পারেনি তাঁকে। কখনো কৃষিকাজ, কখনো রাজমিস্ত্রি, টাইলস মিস্ত্রি, কখনো প্লাম্বার—যে কাজ পেয়েছেন করেছেন, শুধু পড়াশোনা থামিয়ে না দেওয়ার জন্য।
সবচেয়ে বড় সহায়তা পান মোজাম্মেল হোসেন মোল্লার কাছ থেকে। আশ্রয়, অনুপ্রেরণা, পরামর্শ—সবকিছু দিয়েছেন তিনি। সেই শক্তিকে ভিত্তি করে শরীফ একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেন। টানা ১৮টি ভাইবা ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। অবশেষে ১৯তম ভাইবায় বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি পান।
এর আগে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতেও চাকরি করেছেন তিনি। যে হাসপাতালে একসময় বাবাকে ভর্তি নিতে পারেননি—সেই পিজি হাসপাতালেই তিনি পরে চাকরি করেন। ডিউটি শেষে রাতভর যাতায়াত করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শেষ করেন গ্রাজুয়েশন।
আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। সরকারি চাকরি করছেন, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, লাখো তরুণের অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছেন।
তবে মনের ব্যথা একটি— স্বপ্ন পূরণ হলো ঠিকই, কিন্তু বাবা–মা দেখে যেতে পারলেন না।
শরীফের বিশ্বাস— “জীবনে কষ্ট আসবেই, কিন্তু ইচ্ছে শক্তি আর মনোবল থাকলে কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়।”




