
আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু /টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোন বালু মহাল না থাকলেও রাজনৈতিক পরিচয়ে অন্তত ৪০ টি অবৈধ বালু মহাল চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা ইউনিয়ন ও এলেঙ্গা পৌর এলাকায় এসব অবৈধ বালু মহাল চালু রয়েছে। যমুনা সেতু পূর্ব থানা এলাকায় থানাঘাট হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও শ্যামশৈল নামকস্থানে, বিনোদ লুহুরিয়া, সরাতৈল, বল্লভবাড়ী, বিয়ারা মারুয়া, জোকারচর, কদিম হামজানী, কামাক্ষার মোড়, সল্লা চরপাড়া, ধলাটেংগর, ভাবলা, কুড়িঘরিয়া ও পৌলী এলাকার অনন্ত ৪০টি অবৈধ বালুঘাট পরিচালিত হচ্ছে, যা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়। এসব বালু মহাল পরিচালনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস ছালাম এর নামে। তার সাথে যুক্ত রয়েছেন মোঃ রহমত উল্ল্যাহ। তাদের বালুঘাটটি রয়েছে বল্লভবাড়ী বিয়ারা মারুয়া এলাকায়। টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার নাম ব্যবহার করে উপজেলা ছাত্র দলের সহ-সভাপতি পরিচয়ে জনৈক সোলায়মান আকন্দ ও ক্যাশিয়ার হিসাবে আছেন, আব্দুল লতিফ আকন্দ এমন অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য হিসাবে পরিচয়দানকারী ইমরান হোসেন তালুকদার ও কামরুল মের্সাস মন্ডলবাড়ী বালুঘাটটি সরাতৈল এলাকায় পরিচালনা করছেন। তাদের সাথে আছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, জোকারচর কদিম হামজানীতে নজরুল ইসলাম বিদ্যুত, পটলের একজন স্কুল শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। তারা আরো জানায়, তাদের সাথে আছেন খন্দকার ইকবাল ও সিরাজগঞ্জের নজরুল ইসলাম। কামাক্ষ্যার মোড় এলাকায় বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে বালু মহালটি কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়ার নামে পরিচালিত হচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। ধলাটেংগরে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে রাজাবাড়ীর জনৈক উজ্জল সরকার বালুঘাটটি পরিচালনা করছেন খন্দকার আল আমিন। একই এলাকায় জনৈক উছিম উদ্দিনের ঘাট হিসাবে পরিচালিত ঘাটটি পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছেন কথিত দুই সাংবাদিক এমন অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকায় আরো কয়েকটি বালুঘাট পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে লেবু, আলাল, মিনু, বাতেন ফরহাদ সরকার, সাফি খান সোহেল ও বাবু এর নামে। একটি প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন, আসাদুজ্জামান আসাদ। এছাড়াও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি এই অবৈধ ভালোভাবে সাথে সাথে যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কালিহাতী উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অবৈধ বালু মহালে অভিযানে গিয়ে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ১০ ধারা মতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদন্ড করলেও বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধ বালু মহাল। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, ভারী যানবাহনে বালি পরিবাহনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সড়ক, মহাসড়ক, এলাকার বসতবাড়ী, কৃষি জমি ও সাধারন পথচারীগণ। স্থানীয় মানুষজন ধুলাবালি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ১০ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ইজারা গ্রহীতা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উত্তোলিত বালু বা মাটি কোনক্রমেই সর্বসাধারণের ব্যবহার্য রাস্তা বা রাস্তা সংলগ্ন স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক বা উন্মুক্ত স্থানে স্তুপ আকারে রাখিয়া স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করিতে পারিবেন না। ইজারা গ্রহীতা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উত্তোলিত বালু বা মাটি সংশ্লিষ্ট মালিক বা আইনানুগ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি ব্যতীত স্থানীয় জনগণের জায়গা জমিতে বা সরকারের জায়গা জমিতে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাঠ, আঙ্গিনা বা জায়গা জমিতে স্তূপ আকারে রাখিতে পারিবেন না। এর অপরাধে বিচার ও দন্ড (১) এই আইনের ধারা ৪ ও ৫ এ বর্ণিত বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করিলে বা এই আইন বা অন্য কোন বিধান লংঘন করিয়া অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। উক্ত অপরাধে ব্যবহৃত ড্রেজার, বালু বা মাটিবাহী যানবাহন বা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হইবে। কালিহাতী উপজেলা ছাত্র দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ইমরান ও কামরুল ছাত্র দলের কেউ নয়। কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়া বলেন, তিনি কোন প্রকার বালু ব্যবসার সাথে জড়িত নন। এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খাইরুল ইসলাম বলেন ইতিমধ্যেই বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।




