
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ
ঢাকার ধামরাইয়ে ৭ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে বৈঠকে ৫লাখ টাকা জরিমানা করেন বিএনপি নেতা রুস্তম আলী। এই ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশকে কোন কিছু না জানিয়ে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক মেম্বার আতা মিয়াকে ৫লাখ টাকা জরিমানা করেন রুস্তম আলী। তিনি উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চর ডাউটিয়া এলাকায়র বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (১৪অক্টোবর) সন্ধ্যায় চরডাউটিয়া গ্রামের প্রবাসী আমির আলীর বাড়ীতে প্রহসনের সালিশি বৈঠকের ঘটনা ঘটে।
এ সালিশি বৈঠকে সাবেক ইউপি মেম্বার আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ৭সদস্যের একটি জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ আতর আলী উরফে আতামিয়াকে নগদ ৫লাখ টাকা জরিমানা করানো হয়। আর এ সালিশি বৈঠকের পুরো নেতৃত্ব দেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রুস্তম আলী ও মাতাব্বর মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও নেদু মিয়া।
৭ম শ্রেণী স্কুল ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য হিসেবে ধর্ষকের কাছ থেকে আদায় কৃত জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা থেকে দুই লাখ মেয়ের বাবাকে দেওয়া হয়। বাকী টাকা রুস্তম আলীর পকেটে রয়েছে বলে জানান এলাকার লোকজন। ওই প্রহসনের সালিশি বৈঠকে জুড়ি বোর্ডের সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হালিম মাতাব্বর, মোহাম্মদ নেদু মিয়া, মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ মানিক আলী, কালাচান মিয়া ও সিদ্দিক আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উক্ত গ্রামের প্রতিবন্ধী সায়েদ আলীর ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েকে ফুসলিয়ে একই গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সাবেক ইউপি মেম্বার আতর আলী ওরফে আতা মিয়া তার ফাকা বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর একটি ঘড়ের ভেতর নিয়ে দরজা-জানালা আটকিয়ে ওই স্কুল ছাত্রীকে জবরদস্তি ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন এসে ঘড়ের দরজা খুলে ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টা কারি সাবেক ওই ইউপি মেম্বার আতা মিয়াকে উত্তম-মধ্যম দেয়। এরপর ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের চেষ্টাকারীর আতা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরে বাধা দিয়ে বিএনপি নেতা রোস্তম আলী তার সাঙ্গ-পাঙ্গাদের নিয়ে এ প্রহসনের শালিশী বৈঠকের আয়োজন করে। তবে এ ব্যাপারে ধামরাই থানা পুলিশকে কোনো প্রকার অবহিত না করেই তারা শালিশী বৈঠকে ঘটনাটি অযোগ্য অপরাধ হলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শালিশী বৈঠকে করে।
এ ব্যাপারে শালিসী বৈঠকের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মালেক বলেন, উক্ত ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনায় শালিসের বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বিএনপি নেতা রোস্তম আলী আমাকে ডেকে প্রবাসী আমির আলীর বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি গিয়ে দেখি পূর্ব থেকেই ১৫-২০ জন মানুষ ওই বাড়ির উঠানে বসে আছে। পরে আমাকে শালীসি বৈঠকের সভাপতি করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। ওই বিএনপি নেতা রোস্তম আলীর পাঠানো উপরোল্লিখিত ৭ সদস্যের জুড়ি বোর্ড ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি সদস্য আতা মিয়া ৫লাখ টাকা জরিমানা করে। আমার উপস্থিতিতেই ওই জরিমানার টাকা যৌথ ভাবে নেদু মাতাব্বর ও বিএনপি নেতা রোস্তম আলীর হাতে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা রোস্তম আলী বলেন, মেয়েটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মামলা না করে গ্রাম্য শালীসি বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। শালীসের দুই দিন পরে সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মালেকের বড় ছেলে মো.মনির হোসেনের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর হাতে জরিমানার ৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রী বাবা জানান, জরিমানার দুই লাখ টাকা আমার হাতে তুলে দেয় বিএনপি নেতা রুস্তম আলী।
এ ব্যাপারে, ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি মেম্বার আতা মিয়া বলেন, আমি অপরাধ করেছি তাই ৫ লাখ টাকাও জরিমানা দিয়েছি। পরবর্তীতে কি হয়েছে তা আমি জানি না।
এ ব্যাপারে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এস এম নায়েবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনায় লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে মীমাংসার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। এ ঘটনা গ্রাম্য শালীসি বৈঠকে আপোষের অযোগ্য অপরাধ।




