বাংলাদেশ রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ৩৩ মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ রঞ্জন শামস।
০৩ জুলাই, ২০২৪, বৃহস্পতিবার ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হোসেন জিসান জামিন দেন মেয়র রঞ্জনকে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হোসেন জিসান।
বেড়া পৌরসভার মেয়র রঞ্জন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, (ভিওআইপি) ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মেয়র রঞ্জনসহ চারজনের ১৯১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ২০২১ সালের সেই মামলায় ২৩ সেপ্টেম্বর, মেয়র রঞ্জন এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরীন হক। উক্ত গ্রেফতারি পরোয়ানাটি তামিলের জন্য পাবনার বেড়া থানায় পাঠানো হয়।
৩৩ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেন আদালতের পরোয়ানা কার্যকর করা হয়নি, সে বিষয়ে বেড়া থানার সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রশিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি বেড়া থানায় যোগ দেন। পরে জানতে পারেন, বেড়া পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) আবুল কালাম আজাদ এর কাছে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না হওয়ার বিষয়ে শুক্রবার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বেড়া পৌরসভার মেয়র রঞ্জন এর বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা থাকার তথ্য তাঁকে থানার ওসি জানাননি। তবে দুই দিন আগে সংবাদমাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য জানতে পারেন।
বৃহস্পতিবার ৩৩ মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেওয়ার পর ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত থেকে মেয়র আসিফ রঞ্জন শামসের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বেড়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার পূর্বের ওসি কেন মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করেননি, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি বৃহস্পতিবার থানায় যোগ দেওয়ার পর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত থেকে একটি কাগজ হাতে পেয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়র রঞ্জন আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা বিনা তামিলে ফেরত পাঠানো হোক।’
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের ঢাকা ইউনিটের সমন্বয়কারী আইনজীবী মশিউর রহমান বলেন, ৩৩ মাস আগে একজন মেয়রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও সেটি তামিল হয়নি কিংবা তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি, এটি অস্বাভাবিক ঘটনা। কারও নামে মামলা হলে কিংবা আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে যত দ্রুত সম্ভব বিচারের মুখোমুখি হওয়া একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব। আইন সবার জন্য সমান। পুলিশের দায়িত্ব আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা এ ব্যাপারে বলেন, আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা পুলিশের দায়িত্ব। আদালতের যেসব পরোয়ানা কার্যকর হয়নি তার তালিকা প্রতি সপ্তাহেই জেলার পুলিশ সুপার এবং মহানগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে দিতে হয়। তারপরও ৩৩ মাস কীভাবে আদালতের পরোয়ানা বিনা তামিলে পড়ে থাকল, সেটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করে।