
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি
সুন্দরবনের স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানো চারটি কুমিরের মধ্যে একটি কুমির বিচরণ করছে পানগুছি, বলেস্বর ও কচা নদীর ত্রিমোহনায়। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে এ অঞ্চলের রেনু পোনা সংগ্রহকারী জেলেদের মধ্যে। এর আগে লবণ পানির কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি গবেষণার জন্য সুন্দরবনে চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে অবমুক্ত করা হয়েছে।
অবমুক্ত করা চারটি কুমিরের মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করলেও একটি কুমির বের হয়ে লোকালয়ের দিকে এসেছে।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিরটি সুন্দরবন থেকে মোংলা, রামপাল সর্বশেষ মোরেলগঞ্জের পানগুছি পিরোজপুরের কচা ও শরনখোলার বলেস্বর নদীর ত্রিমোহনায় অবস্থান করছে। কুমিরের গতিবিধিতে নজর রাখা বিশেষজ্ঞ দলের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির।
অপর দিকে তিন নদীর ত্রিমোহনায় কুমিরের অবস্থান বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় নেট দিয়ে বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা সংগ্রহকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই নদীত নামা বাদ দিয়েছেন। ফলে সাদা সোনা খ্যাত রেনু পোণা সরবরাহকারী মোরেলগঞ্জ-শরণখোলার আড়তগুলোতে রেনু পোনার সংকট দেখা দিয়েছে।
মোরেলগঞ্জের সন্ন্যাসী লঞ্চঘ্ট আড়তের সেলিম জানান, কুমিরের অবস্থান তিন নদীর মোহনা এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রেনু পোনা সংগ্রহকারী জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আড়তগুলোতে রেনু পোনার সংকট দেখা দিয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের লোনা পানির চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানো হয়েছে। পরে দেখা যাচ্ছে, তিনটি কুমির সুন্দরবনে ফিরে গেছে, তবে একটি বহু পথ ঘুরে এখন মোরেলগঞ্জের পানগুছি, পিরোজপুরের কচা ও শরনখোলার বলেস্বর নদীর ত্রিমোহনায় অবস্থান করে ঘোরাফেরা করছে। মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। কুমিরটি নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
গত ১৩ মার্চ সর্বপ্রথম দু’টি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত ১৬ মার্চ স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে আরও একটি কুমিরের সঙ্গে এই কুমিরটিকেও অবমুক্ত করা হয়েছিল সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করেছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।
হাওলাদার আজাদ কবির আরও বলেন, সুন্দরবনের কুমির কোথায়, কীভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে এর আগে বিস্তারিত কোনো গবেষণা হয়নি। আমরা প্রতি বছরই সুন্দরবনে কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে অবমুক্ত করে থাকি। এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০০ কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের গতিবিধি ও পরবর্তীতে তারা কোথায় যায় সেসব গবেষণা কখনও করা হয়নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে। ফলে আমরা কুমিরের আচরণ ও গতিবিধিতে আরও ভালোভাবে নজর রাখতে পারব।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহম্মদ নুরুল করিম জানান, এর আগে সুন্দরবনে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে কচ্ছপের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছিল। তবে কুমির নিয়ে সুন্দরবনে এটিই প্রথম গবেষণা। কুমির গবেষণার এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে আইইউসিএন আর জিআইজেড। আগামী এক বছর এই কুমিরগুলোকে নজরদারিতে রাখা হবে। গবেষণা চালানো কুমিরের ভেতরে দু’টি নারী ও দু’টি পুরুষ কুমির রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।